ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনকে হত্যা করতে তাঁকে বহনকারী বিমানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল ইচ্ছাকৃতভাবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে এই ঘটনার ছক সাজানো হয়– এমন তথ্যই দিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। তবে প্রিগোজিনকে হত্যায় নির্দেশের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন। অন্যদিকে প্রিগোজিনের সমর্থকদের দাবি, ওয়াগনারপ্রধানকে ইচ্ছাকৃতভাবেই হত্যা করা হয়েছে। খবর এপি ও বিবিসির।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বিরোধী মত দমানোর চেষ্টায় পুতিনের দীর্ঘদিনের ইতিহাসের সঙ্গে প্রিগোজিনকে বহন করা বিমানে বিস্ফোরণের ঘটনার মিল রয়েছে। গত জুনে রুশ নেতাকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহের প্রতিশোধ নিতেই প্রিগোজিন এবং তাঁর বেশ কয়েকজন লেফটেন্যান্টকে পুতিন হত্যা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই কর্মকর্তারা কোনো প্রমাণ বা বিস্তারিত তথ্য দেননি। গোয়েন্দাদের তথ্যের সঙ্গে প্রিগোজিন সমর্থকদের দাবিও মিলে যায়। মেসেজিং অ্যাপ চ্যানেলে তারা দাবি করেছেন, বিমানটি ইচ্ছাকৃতভাবে ভূপাতিত করা হয়েছে। তাদের ধারণা, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত বা বোমা দ্বারা লক্ষ্যবস্তু করা হয়ে থাকতে পারে।
ক্রেমলিনপন্থি ফেয়ার রাশিয়াপন্থি পার্টির নেতা এবং পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান সের্গেই মিরোনভ তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেন, প্রিগোজিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি লেখেন, রাশিয়া, ইউক্রেন এবং পশ্চিমের অনেক লোকের সঙ্গে তালগোল পাকিয়েছিলেন প্রিগোজিন।
ওয়াগনারপ্রধানকে হত্যায় পুতিন সরাসরি জাড়িত– মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করে এমন দাবি করেছেন। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও পরোক্ষভাবে পুতিনের ওপরই দায় চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় আমাদের কিছু করার নেই। সবাই বোঝে, এসব কে করে?’
প্রিগোজিনকে হত্যায় ক্রেমলিনের নির্দেশের অভিযোগ অস্বীকার করে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গতকাল শুক্রবার ব্রিফিংয়ে বলেন, বিমান দুর্ঘটনা, প্রিগোজিনসহ অন্য যাত্রীদের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘিরে অনেক জল্পনাকল্পনা চলছে। এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। প্রিগোজিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পুতিন যোগ দেবেন কিনা, তা বলা সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে পেসকভ বলেন, প্রেসিডেন্টের কর্মসূচি আগেই নির্ধারিত রয়েছে।
রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য। গত বুধবার প্রিগোজিনের বিমান বিধ্বস্ত হলে বাইডেন বলেছিলেন, রাশিয়ায় যা ঘটে, এর সবকিছুর পেছনেই পুতিন জড়িত। এদিকে, শোক পালন করলেও এখনও প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি ওয়াগনার। বিমানটিতে প্রিগোজিন, তাঁর সেকেন্ড ইন কমান্ড, তিন ক্রুসহ ১০ জন আরোহী ছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন এসেছে, নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকলেও ঠিক কী কারণে ওয়াগনারের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা একই ফ্লাইটে ছিলেন? মস্কো থেকে কেন তারা সেন্ট পিটার্সবার্গে একসঙ্গে যাচ্ছিলেন, তা এখনও অজানা। প্রিগোজিনের মৃত্যু এবং এ নিয়ে পুতিনের বক্তব্য খুব একটা ফলাও করে প্রকাশ করেনি রুশ গণমাধ্যমগুলো। এর পরিবর্তে তারা পুতিনের ব্রিকস সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া বক্তব্য গুরুত্ব দেয়। সূ/সমক,,
Leave a Reply