সিনিয়র রিপোর্টার, শিবচর এক্সপ্রেস:
শিবচরের শারমিনকে ঠেকাতে পারেনি দারিদ্র্যতা ও নদী ভাঙনে, তার স্বপ্ন উিচ্চশিক্ষিত হয়ে দেশের সেবা করবেন। তবে স্বপ্ন পূরনে বড় বাঁধা আর্থিক অসচ্ছলতা।
গত শুক্রবার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে স্থানীয় নুরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ভ্যান চালক আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে শারমিন।
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের ভ্যান চালক আব্দুল কুদ্দুসের অভাবের সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে ভ্যান চালক আব্দুল কুদ্দুস তার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালানো তাঁর জন্য কষ্টকর। তবে অদম্য মনোবল থাকলে দারিদ্র্য জয় করা সম্ভব, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন কুদ্দুসের মেয়ে শারমিন।
উপজেলার নদীভাঙ্গন, চরাঞ্চল ও বন্যাকবলিত এলাকা বন্দরখোলার চরের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার। নদী ভাঙন আর দারিদ্রতা ঠেকাতে পারেনি তাকে।নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের পড়াশোনা ঠিক রেখেছেন। চোখে-মুখে স্বপ্ন জয়ের আশা। কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেয়ার মতো তার মেধা থাকলেও নেই আথির্ক সচ্ছলতা। তিন ভাইবোনের মধ্যে শারমিন মেজ। তার স্বপ্ন তিনি উচ্চশিক্ষিত হয়ে দেশের সেবা করবেন। তবে স্বপ্ন পূরনে বড় বাঁধা আর্থিক অসচ্ছলতা। গত ২০২০ সালের বন্যায় পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে ঘড় বাড়ি সব হারিয়ে সারমিনের বাবা আব্দুল কুদ্দুস নিঃস্ব হয়ে পড়েন। নদী গর্ভে হারিয়ে যায় শারমিনের প্রানের বিদ্যাপীঠ নুরউদ্দিন মাদবরের কান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। এরপর অনিশ্চিত হয়ে পরে পড়ালেখা । পাঁচ কিলোমিটার দুরে টিনসেড করে শুরু হয় স্কুলের কার্যক্রম, ঝড়ে পরে অনেক শিক্ষার্থী। তবে সারমিনের অদম্য ইচ্ছে শক্তি দমাতে পারেনি তার লেখা পড়ার প্রবল আগ্রহকে। সকালে মক্তবে প্রাইভেট ও বিকেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের পড়িয়ে নিজের পড়াশোনা ঠিক রেখেছেন শারমিন।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় শারমিনের। সে বলে, ‘আব্বা ভ্যান চালায়।বয়স্ক লোক।নিয়মিত ভ্যান চালাতে পারে না।তাই ঘরে সব সময় অভাব-অনটন লেগে থাকত। তবু বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের লেখাপড়া করিয়েছেন। মা-বাবা আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকেরা আমার পাশে ছিলেন। টাকার অভাবে টিউশনি পড়তে না পারলেও বিদ্যালয়ের স্যারেরা পড়াশোনার ব্যাপারে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। সে আরও বলে, ‘আমার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। অনেক সময় গাড়ি ভাড়া না থাকলে হেঁটেই স্কুলে যেতাম। ঝড়, বৃষ্টি, তুফানেও স্কুলে অনুপস্থিত থাকিনি। নিয়মিত স্কুলে উপস্থিতি ও প্রতিদিন ৫/৬ ঘণ্টা বাড়িতে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা মাধ্যমে এ ফলাফল অর্জিত হয়েছে। ভবিষ্যতে একজন চিকিৎসক হয়ে এলাকার দরিদ্র মানুষদের সেবা করতে চাই। তার বাবা আবদুল কুদ্দুস জানান, তাঁদের মেয়ে লেখাপড়ার বাইরে অন্য কোনো আবদার করেনি। অভাবের সংসারে তার অনেক শখ পূরণ করতে পারেননি। মেয়ের এই ফলাফলে তাঁরা খুশি।তবে এখন তাকে কলেজে পড়াতে তার অনেক কষ্ট হবে।তাই সমাজের সকলকে শারমিনের পড়া লেখার দিকে নজর দিতে তিনি আহবান জানিয়েছেন।
নুরউদ্দিন মাদবরের কান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত। সে স্কুলে একজন মনোযোগী ছাত্রী হিসেবে সবার প্রিয় ছিল। পিছিয়ে পড়া একটা এলাকা থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করা মোটেই সহজ নয়। আমরা শিক্ষকেরা সব সময় তার পাশে ছিলাম। তার ভবিষ্যৎ জীবনের সফলতা কামনা করছি।’
Leave a Reply