এস এইচ, হেমায়েত – সৌদি আরব প্রবাসী।
য়ের তলার জমি শক্ত না হলে নাকি আকাশ ছোঁয়া যায় না- প্রবাস জীবনে কেউ দুঃখ পায় না, কারন দুঃখ পেতে আপনজন প্রয়োজন হয়। আপনজন ব্যতীত অন্য কেউ দুঃখ দিতে পারে না। প্রবাস জীবন এমনই যে এই জীবনে দুঃখ পাওয়া যায় না। তবে প্রবাস জীবনের সঙ্গী হয় কষ্ট এবং এমন ভাবে লেগে থাকে যে পিছুই ছাড়তে চায় না। দুঃখ এবং কষ্টের মাঝে যে বিশাল ব্যবধান তা প্রবাসীদের মতো অন্য কেউ অনুভব করতে পারে না। প্রবাসে প্রবাসীরা যা অর্জন করেন সেটা অর্থ কিংবা শিক্ষা যাই হোক না কেন সেটা তার অতুলনীয় কষ্টের ফসল ছাড়া কিছুই না। শহর থেকে বেশ দূরে সমুদ্রের পাশে আমার কর্মস্থল। প্রতিদিন সকাল বেলা নিজে নাস্তা করে খেয়ে বাসে চেপে শহরের কোন এক টানেলের ভেতর দিয়ে আমাকে যেতে হয় কর্মস্থলে। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনীর পর যখন রাতে নিজের ঘরে ফিরি, ফিরে এসে আবার সেই রান্না এরপর ক্লান্ত মুখে চুপচাপ শুয়ে পরা। এভাবেই কেটে যাচ্ছে প্রতিটা দিন! প্রতিটাক্ষন। একজন প্রবাসীর দেহ থাকে প্রবাসে, কিন্তু মন পড়ে থাকে স্বদেশের উঠোনে। প্রিয়জনদের মুখ তার চোখে ভাসে। স্বদেশের মেঘ-বৃষ্টি-রোদ তাকে কাছে ডাকে, ক্ষণে ক্ষণেই ঝাপসা হয় তার চোখ। প্রবাসীরা দিনান্ত পরিশ্রম করে, কিন্তু কয়জনই বা ধরতে পারে সোনার হরিণ? সে সোনার হরিণের পেছনে দৌড়াতেই থাকে। সময় যায়, ভবিষ্যৎ মেঘে ঢাকা-ই থেকে যায়। প্রবাসীদের কেউ কেউ হয়তো সোনার হরিণের নাগাল পায়, কিন্তু সিংহভাগই যেই লাউ সেই কদু হয়ে থেকে যায়। তবু প্রবাসে মানুষ আসে, আসছে। এসেই সে বুঝতে পারে বড় ভুল করে ফেলেছে, কিন্তু শোধরাবার সুযোগ থাকে না আর। পেছনে ঋণের বোঝা, বর্তমান এলোমেলো, ভবিষ্যৎ অন্ধকারময়। এ নিয়েই বর্তমানে একজন মরু প্রবাসীর পথ চলা। তার বুকের মধ্যে হতাশা, হাহাকার, সঙ্গী হয় ঘুমহীন রাত। এভাবেই সামনে পথ চলা। সময়ের কাছে সে বন্দি, বন্দি জীবনের জন্য জীবিকার কাছে। তাইতো প্রবাস মানে কারারুদ্ধতার এক রুদ্ধ দ্বার। ক্ষুধা নিবারণ করার ইচ্ছা নিয়ে, মা মাটি ও আপনজনদের ছেড়ে অজানা অচেনা এক দেশের মাটিতে পাড়ি জমায় প্রবাসীরা প্রবাসে সবার একই চিন্তা কিভাবে আরও পরিশ্রম করে অল্প সময়ে বেশি উপার্জন করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানো যায়, পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে, সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে ও সোনালী স্বপ্নের হাতছানিতে পরিবারের বেকার ছেলেরা জীবনযুদ্ধে, জীবিকা ও জীবনের তাগিদে বুকভরা কষ্ট নিয়ে প্রবাসী হয়। আবার কেউ কেউ বেসুরা কণ্ঠে গেয়ে ওঠে, ‘বন্ধু বন্ধু বন্ধুরে তোরা কেমন আছিস রে, তোদের ছেড়ে দূর প্রবাসে একা লাগেরে। সুখ দুঃখ ঘিরে, তোরা থাকিস যতই দূরে’। এ গানটা যেন সবাইকে আবারও এক করে। আর সেই গান শুনতে শুনতে ঘুমানোর চেষ্টা করি।
Leave a Reply