প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রসহ অগণিত বিষয়ে অভিন্ন মূল্যবোধ পোষণ করে। প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখলে দেশের উন্নতি হয়– আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। ভারতের সহযোগিতায় নেওয়া তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের যৌথ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি যৌথভাবে এগুলো উদ্বোধন করেন। এ সময় মোদি বলেন, এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে আমরা আবার একত্র হয়েছি। আমাদের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি । উদ্বোধন করা তিনটি প্রকল্পের মধ্যে ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগ ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগ বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রায় ৬৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইনের নির্মাণকাজ ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের দ্বিতীয় ইউনিট উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের এনটিপিসি লিমিটেড যৌথভাবে কোম্পানি গঠন করে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে। প্লান্টের প্রথম ইউনিট ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে যৌথভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দুই দেশের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক বাস্তব ফল অর্জন করেছি। যার মধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগ সহজীকরণ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরজীবী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে আসন্ন দীপাবলি উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদি ও ভারতের জনগণকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন তিনি।
ঢাকা থেকে শেখ হাসিনা এবং নয়াদিল্লি থেকে নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাও এতে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। তিনটি প্রকল্প হচ্ছে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ এবং মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের দ্বিতীয় ইউনিট।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি আশাবাদী, সামনের দিনগুলোতে সহযোগিতার দৃষ্টান্তস্বরূপ আরও এমন অনেক সাফল্যের উদাহরণ তৈরি হবে; যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভিত্তি ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ভাষা। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে আমাদের অর্জন দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো এবং উষ্ণ আতিথেয়তা প্রদর্শনের জন্য নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের জনগণ ও তাঁর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণের জন্য ভারত সরকার ও নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। নির্মাণ-সংশ্লিষ্ট সবাইকেও তিনি ধন্যবাদ জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, যে তিনটি প্রকল্প আমরা উদ্বোধন করেছি, তা উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। এই প্রকল্পগুলো আঞ্চলিক যোগাযোগের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ভারতের জনগণ যাতে ব্যবহার করতে পারে, সে জন্য সরকার উন্মুক্ত করে দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সূ/বাসস/সমক,,
Leave a Reply